একে আমরা রাস্তায় পাই ঠিক এমন অবস্থায়:
সাগর নামের এই ছেলেটি তার জীবনের যে গল্প শোনায় তা কেবল হতভম্বই করে দেয় না ক্রমশ সরে যায় আমাদের শরীরের চকচকে কাপড় পাল্লা দিয়ে সরে পেটের পাতলা চামড়া। উম্মুক্ত হয়ে পড়ে একপেট আবর্জনা। সে দুর্ঘটনায় হারায় তার দুপা, একটা হাত।
এরপরই তার বাবা-মা তাকে ফেলে দেয়।
সাগরের এখন প্রয়োজন একটা হুইল-চেয়ার। আমাদের হাতে একটা হুইল-চেয়ার আছে বটে যেটা পাঠিয়েছিলেন নাজমুল হুদা এবং তার বন্ধু তানভির হোসাইন [১]। জরুরি অবস্থার জন্য যেটা আমরা রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নেই এটা সাগরকে দিয়ে দেওয়ার জন্য।
চলাফেরায় ওর বড় কষ্ট! এক হাতে যে প্রকারে এ গরম পিচের রাস্তায় শরীরটাকে টেনে টেনে নিয়ে যায় এটা কঠিন হৃদয়ের একজন মানুষেরও বুক থেকে পাক খেয়ে উঠবে তীব্র হাহাকার।
এর বাবা-মা একে ফেলে দিয়েছে জীবনের এই কুৎসিত দিক যেমন আছে তেমনি আছে আলোকিত এক দিকও। এর ভাই একে বুকে আগলে রেখেছেন। আমরা খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম সাগরের ভাইকে এক নজর দেখার জন্য।
সাগরের ভাই 'ভাসানি' নামের এই পাতলা-দুবলা মানুষটার ছায়া ছড়িয়ে যায় চারদিক।
সাগর নিয়ে আমরা খানিকটা ভয়ে-ভয়ে ছিলাম হুইল-চেয়ারে সাগর নিজে-নিজে উঠতে পারবে তো? কিন্তু কেবল একটা হাতের সাহায্যে সাগর যে ভঙ্গিতে হুইল-চেয়ারে উঠে এটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
জীবন নিয়ে একটা কথা আছে 'জীবনকে দেখতে হয় একজন মৃত্যুপথযাত্রি মানুষের চোখ দিয়ে' এটাকে খানিকটা বদলে বলা যেতে পারে, জীবনকে দেখতে হয় সাগরের চোখ দিয়ে...।